আমি এবং আমার জননী
আম্মুর সাথে আমার সম্পর্ক, পুরোটাই উল্টো। আমি কিছু একটা আকার ইঙ্গিতে বুঝাতে চাইলে, সবসময়ই আমাকে উনি উলটা বুঝেন। কেন জানি বুঝতে চান না, নাকি আমি বুঝাতে অক্ষম সেটাই বুঝতে পারছি না। আমার সব প্ল্যান ক্লিন বোল্ড করে উড়িয়ে দেন।
সেদিন আম্মুকে বললাম "আম্মু কিছু টাকা দাও। আমি একদম ফকিন্নি হয়ে গেছি।"
আমার কথা শুনে দেখলাম আম্মু আম্মুর মানিব্যাগ খুলছেন। হাতে কিছু টাকা পয়সা আসবে ভেবে, মনে মনে বেশ খুশি হলাম। আর ভাবলা যাক বাবা এবার কিছু টাকা পয়সা হাতে আসবে। কিন্তু আমার সব আশায় জল ঢেলে আম্মু আমাকে একটা পাঁচ টাকার কয়েন হাতে ধরিয়ে বললেন "এই নে ফকিন্নিকে এর বেশি ভিক্ষা দেই না।"
আম্মু বাসায় নাই ভাবলাম কিছু একটা করি যাতে আম্মু খুশি হয়ে, যদি আমাকে কিছু টাকা পয়সা বখশিশ দেন। ভাবলাম মানুষ নতুন নতুন রেসিপি বানিয়ে প্রসংশা পাচ্ছে। তাই নিজস্ব রেসিপিতে, আমি সুন্দর করে করলা দিয়ে মিষ্টি বানিয়ে রাখছি।
বাড়িতে আসার পরে আম্মুকে বললাম "এই নাও করলার মিষ্টি। তোমার জন্য এই মিষ্টি, আমি নিজ হাতে বানিয়েছি।"
আম্মু মিষ্টি মুখে না দিয়েই বললেন " করলার মিষ্টি বাপের জন্মেও দেখি নাই।"
ভাবলাম অম্মু খুশি হয়েছেন। হয়তো কিছু টাকা পয়সা পাওয়া যাবে। আমি খুশি হয়ে বললাম "মানুষ তো নতুন কিছু আবিষ্কার করলে বকসিস টকসিস পায়, এতে করে উৎসাহ বাড়ে।"
আম্মু রেগে বললেন"তোকে যে এই বাড়িতে থাকতে দিছি এটাই তো অনেক।"
ইদে নানা বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে মামাতো বোনের ইদের ড্রেসটা অনেক পছন্দ হইসে। সরাসরি আম্মুর কাছে না চেয়ে, আম্মুকে বললাম "ড্রেসটা অনেক সুন্দর, পড়তেও অনেক আরাম হবে।"
ভাবলাম এতে যদি কাজ হয় আরকি! আম্মু আমাকে উলটা বললেন "এতো গরমে, এসব ড্রেস কি কেউ পড়ে? আর এটা কোনো ড্রেস হলো? এরচেয়ে সুতি জামায় ভালো মানায়"
অনেক বান্ধবীদের বিয়ে হয়ে গেছে। বাচ্চাকাচ্চার মা ও হয়ে যাচ্ছে। সেদিন আমার ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর মেয়ে হয়েছে। ভাবলাম বান্ধবীর মেয়ে হওয়ার কথা আম্মুকে বলি। যাতে আমারও একটা গতি হয়। আম্মুকে গিয়ে বললাম " আম্মু নাসিমার মেয়ে হয়েছে।"
আম্মুকে দেখলাম মুচকি হাসি দিলেন। ভাবলাম এবার মনে হয় ঔষধে কাজ দিয়েছে। আমার জীবনেও কিছু হতে যাচ্ছে। কিন্তু আমাকে নিরাশ করে আমার জননী আমার হাতে একটা পাঁচশো টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিয়ে বললেন " মেয়েটাকে দেখে আয় আর যাওয়ার সময়, খালি হাতে যাইস না। তার জন্য ভালোমন্দ কিছু কিনে নিয়ে যাইস।"
আমি পুরাই শকড
লেখাঃ তামান্না সুলতানা

Comments
Post a Comment